ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি?


প্রিয় পাঠক, ব্লাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি হয়তো অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। এছাড়াও ব্ল্যাক কফির দাম কত। তা বিস্তারিত আলোচনা করব, আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহ পড়েন তাহলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই নিচের আর্টিকেলটিতে, আমরা চেষ্টা করেছি, ব্লাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি, এছাড়া বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনার অনেক উপকারে আসবে তো চলুন, আমরা আজকে সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।

ভূমিকাঃ

কফির স্বরূপ টা কেমন একটা মিষ্টি আর পোড়া পোড়া। আর এই সুরভী ঘ্রাণ, প্রবেশ মাত্রই অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হয় আমাদের শরীরে ও মনে। দূর হয়ে যায় ক্লান্তি নিমিষেই, আর বেশ একটা উৎফুল্ল ভাব চলে আসে। বলতে দ্বিধা নেই, গতকাল আগেও আমাদের দেশে এত বেশি কফি পানের রেওয়াজ ছিল না;
তবে আজকাল যেমন ভালো মানের ইন্সট্যান্ট কফি মেলে, তেমনি পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক মানের কফি বিন। সারা বিশ্বে অনেক ধরনের কফি পাওয়া যায় যেমন, ব্ল্যাক আইভরি,কপি লুওয়াক,ওসপিনা গ্র্যানক্যাফে, গেইশা কফি, সেন্ট হেলেনা, ইত্যাদি কফি পাওয়া যায়। ব্লাক কফি, কে পুষ্টির পাওয়ার হাউস বলা হয়।

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩ এছাড়াও আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ব্লাক কফি।

ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি?

অনেকেই চায়ের চেয়ে কফি বেশি পছন্দ করেন। কফির বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে, তার মধ্যে ব্ল্যাক কফি কে স্বাস্থ্যকর, পানিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেহের ক্লান্তি কাটিয়ে, মন মেজাজ ফুরফুরে রাখতে কফি, অনেকটাই সাহায্য করে। তাই হয়তো আমাদের অনেকেরই সারাদিনের সঙ্গী এক কাপ কফি।
তবে দুধ, ক্রিম, চিনি মিশ্রিত কফিতে হয়তো অনেক স্বাদ থাকতে পারে, কিন্তু উপকারিতা অনেকটাই কমে যায়। নিয়মিত এভাবে কফি খেলে, লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। তাই আপনার কফি খাওয়ার এই অভ্যাসে বদল আনুন, ব্লাক কফির উপকার সম্পূর্ণ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই চিনি ছাড়া খেতে হবে কালো কফি।

ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা-

ব্ল্যাক কফিকে পুষ্টির পাওয়ার হাউস বলা যেতে পারে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩ ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ক্যালোরি, একেবারে থাকে না বললেই চলে। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে ব্লাক কপি। এছাড়াও, ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা সমূহ- চলুন জেনে নিই।
  • অ্যালজাইমার রোগী উপকারী।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • সামগ্রিক শারীরিক ফিটনেস বাড়ায়।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
  • যকৃত সুস্থ রাখতে।
  • লিভার ফাংশন উন্নত করে,
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়,

ব্ল্যাক কফি খাওয়ার অপকারিতা -

ব্ল্যাক কফিতে টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের, মত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা পাওয়া গেছে। তবে বেশি কফি পানের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। অত্যাধিক কফি পানের ফলে উদ্বেগ, নিদ্রা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অনেক সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে আমাদের শরীরের আরো ক্ষতি হয়। পুষ্টিবিদরা রাতে ঘুমানোর আগে কফি পান না করার পরামর্শ দেন।
কফি উচ্চ ক্যাফেইন সমৃদ্ধ। অতিরিক্ত ব্লাক কফি খাওয়ার অপকারিতা হলো- পেটের নানা রকম সমস্যা হয়। যেমনঃ অম্ল, বুক জ্বালাপোড়া করা, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ব্লাক কফি পান শরীরের উপর হরমোনের চাপ বাড়ায়। এতে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ে, তাই ব্লাক কফি পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত।

ব্ল্যাক কফির দাম কত।

সারা বিশ্বে প্রতিদিন আনুমানিক ২০০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়। বর্তমানে শহর কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায়, কফি নিয়ে যতটা হইচই এবং আলোচনা হয়ে থাকে, তা আর কখনোই ছিল না বললেই চলে।
ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে সারা বিশ্বে ৬০ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কফির ব্যাগ বিক্রি হয়েছিল ৯ কোটি টাকায়।
এবছর সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৬ কোটিতে, বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি ইন্দোনেশিয়াতে পাওয়া যায়। 'কপি লুয়াক' এই কফি বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি হিসেবে পরিচিত। তবে আমাদের বাংলাদেশে ভালো মানের ব্ল্যাক কফির দাম ১ কেজির প্যাকেট এর, ৪৫০০-৫০০০টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ব্ল্যাক কফি খেলে কি ওজন কমায়।

ব্লাক কফির মধ্যে কোন ক্যালরি থাকে না। তাই এটি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়। শরীরে বাড়তি মেদ থাকলে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধার সুযোগ পায়। ব্ল্যাক কফি খেলে ওজন কমাতে  বেশ সাহায্য করে। তবে হ্যাঁ, দুধ-চিনি মেশানো সুস্বাদু কফি নয়। সমাধান সূত্র, লুকিয়ে রয়েছে ব্লাক কফিতে।
ব্ল্যাক কফিতে 'ক্লোরোজেনিক' অ্যাসিড নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। রাতের খাবার খাওয়ার পরে এক কাপ ব্লাক কফি খেলে শরীরে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, গুলকোজ উৎপাদনে বাধা দেয়। ফলে নতুন ফ্যাট কোশও তৈরি হয় না। এবার জেনে নেওয়া যাক ব্ল্যাক কফির, উপাদান গুল সম্পর্কে। বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান, উপস্থিত।

এগুলি হলো ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, ক্যাফেইন,ট্রাইগোনেলিক, ও ম্যাগনেসিয়াম। শরীরের গ্লকোজের মাত্রা কমায় একাধিক গবেষণা বলছে, এই ধরনের বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ব্ল্যাক কফির মধ্যে কোন ক্যালরি থাকে না। তাই এটি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।

শরীরে খুব বেশি মেদ না থাকা সত্ত্বেও অনেকের ওজন বেশি থাকে, শরীরের অতিরিক্ত পানি থাকার ফলে। কফি পানের ফলে মূত্র বিসর্জনের মাত্রা বেড়ে যায় কিছুটা। এতে করে বাড়তি পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যা। পানির ফলে শরীরে যে বাড়তি ওজন তৈরি হয়, তা অনেকটা কমে যায়।

চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা।

চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে। সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলির একটি হলো এটি মেটাবলিজম-কে উদ্দীপিত করে। যার ফলে শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হয়। যা গ্লুকোর উৎপাদন কমিয়ে, অতিরিক্ত ফ্যাট উৎপাদন কে প্রতিরোধ করে। চিনি ছাড়া ব্লাড কফি খাওয়ার উপকারিতা হলো মন ও শরীর তরুণ থাকে।

ব্ল্যাক কফি শরীরে ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে পারকিনসন রোগে প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে অন্তত দু'বার, চিনি ছাড়া কফি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। সকালে ব্রেকফাস্টের পরে এক কাপ, এবং সন্ধ্যেবেলায় এক কাপ, কফি খাওয়া যেতে পারে।
এক কাপ কফিতে ৬০% পুষ্টি, ২০% ভিটামিন, এবং ১০% খনিজ ও ক্যালরি আছে। যা হৃদ যন্ত্রসহ দেহের অন্যান্য অংশের উপকার করে থাকে। তবে তা অবশ্যই চিনি ছাড়া হতে হবে।

চিনি ছাড়া দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কফির মগে চুমুক না দিলে অনেকেরই দিন ভালো কাটে না। এমনকি সারা দিনেও বেশ কয়েকবার কফি পান করেন কফি প্রেমীরা।কেউ ব্লাক কফি পান করেন,আবার কেউবা দুধ মিশ্রিত কফি পছন্দ করেন, তবে কফির সঙ্গে দুধ মেশানো স্বাস্থ্যকর নাকি ক্ষতিকর, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

গবেষণা অনুযায়ী, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর সংমিশ্রণ ইমিউন, কোষগুলোতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যকে দ্বিগুণ করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ চিনি ছাড়া দুধ কফি খাওয়া উপকারিতা অনেক রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং ভালো। স্বাস্থ্য চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুষদের ভেটেনারি এন্ড অ্যানিমেল সায়েন্সস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু উইলিয়ামস বলেছেন।

কফি বিনে থাকা পলিফেনল, অন্যদিকে দুধ প্রোটিন সমৃদ্ধ। এই দুটি উপাদান একসঙ্গে হলে শরীরের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

লেখক এর মন্তব্য।

আমার এই আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, ব্ল্যাক কফির দাম কত। কফি কিভাবে খেলে আমাদের ওজন কমে, চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা এছাড়া আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।

আমার লিখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি মন্তব্য করুন, আর এই লেখাটি পড়ে যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url