হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগ বলা হয় কোন শতাব্দীকে?
প্রিয় পাঠক, আপনি হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগ বলা হয় কোন শতাব্দীকে। এটা নিয়ে আপনি হয়তো গুগলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, প্রথম হাদিস সংকলনকারীর নাম কি? এটা নিয়েও আমরা আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগসহ পড়েন, তাহলে উক্ত বিষয়গুলো-বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই আর্টিকেলটিতে, আমরা চেষ্টা করেছি। হাদিস শব্দের অর্থ কি? হাদিস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা,ও সরকারিভাবে সর্বপ্রথম হাদিস সংকলনের উদ্যোগ নেন কে? সর্বপ্রথম সংকলিত হাদিস গ্রন্থ কোনটি এছাড়াও আরো বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। যা আপনার অনেক উপকারে আসবে, তো চলুন আমরা আজকে সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
ভূমিকাঃ
ইসলাম শুধু একটি ধর্মই নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। সাহাবীগণ ইসলামের সর্বশেষ নবীর কথা ও কাজের বিবরণ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে স্মরণ রাখতেন,আবার কেউ কেউ তার অনুমতি সাপেক্ষে কিছু কিছু হাদিস লিখে রাখতেন। এভাবে তার জীবদ্দশায় স্মৃতিপটে মুখস্ত করে রাখার সাথে সাথে কিছু হাদিস লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।
কিন্তু সাবধান- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করবেন না। আর আপনারা নিজ নিজ এলাকায় মজলিস প্রতিষ্ঠা করে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদিস শিক্ষা দিতে থাকুন। কেননা জ্ঞান-গুপন থাকলে তা একদিন বিলুপ্তি হয়ে যায়।
হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগ বলা হয় কোন শতাব্দীকে?
ইসলাম শুধু একটি ধর্মই নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটি সর্বজনীন ও সর্বকালীন বিধি-বিধানের সমষ্টি। ইসলামী জীবন বিধান তত্ত্ব ও তথ্যগতভাবে দুইটি মৌল বুনিয়াদের উপর স্থাপিতঃ চলুন আমরা আজকে হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগ বলা হয় কোন শতাব্দীকে বিস্তারিত জানি। হিজরির তৃতীয় শতক ছিল হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগ। এ সময় হাদিসের বিশুদ্ধতম ছয়টি কিতাব সংকলিত হয়।
এগুলোকে সিহাহ সিত্তাহ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বলা হয়। গ্রন্থ ছয়টি হলোঃ-
- ১। সহিহ বুখারী।
- ২। সহিহ মুসলিম।
- ৩। সুনানে নাসাই।
- ৪। সুনানে আবু দাউদ।
- ৫। জামি তিরমিযি।
- ৬। সুনানে ইবনে মাজাহ।
প্রথম হাদিস সংকলনকারী নাম কী?
সাহাবীগণ ইসলামের সর্বশেষ নবীর কথা ও কাজের বিবরণ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে স্মরণ রাখতেন আবার কেউ কেউ তার অনুমতি সাপেক্ষে কিছু কিছু হাদিস লিখে রাখতেন। এভাবে তার জীবদ্দশায় স্মৃতিপটে মুখস্ত করে রাখার সাথে সাথে কিছু হাদিস লিখিত আকারে লিখিত শুদ্ধ ছিল।
হযরত আলী, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত আনাস ইবনে মালিক প্রমুখ সাহাবীগণ কিছু কিছু হাদীসটি কি বন্ধ করে রাখতেন। হযরত আবু হুরায়রা বলেন ' আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ব্যতীত আর কোন সাহাবী আমার অপেক্ষা অধিক হাদিস জানতেন না। কারণ তিনি হাদিস লিখে রাখতেন আর আমি লিখতাম না।
নবীর জীবদ্দশায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বহু কাজকর্ম লিখিতভাবে সম্পাদনা করা হতো। আর ইসলামে নবীর আদেশক্রমে যা লেখা হতো তাই হাদিস এর অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে নবীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন কারণে হাদিস সংকলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কুরআন মাজিদের সাথে হাদীস সংমিশ্রণ হওয়ার আশঙ্কায়, কুরআন পূর্ণ গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত হাদিস লিপিবদ্ধ করতে কেউ সাহস পায়নি।
আবু বক্করের আমলে কুরআন মাজীদ গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হলে সাহাবীগণ হাদিস লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারে আর কোন বাধা আছে বলে অনুভব করেননি। হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষভাগে সাহাবী ও সায়েবীগণ, প্রয়োজন অনুসারে কিছু হাদিস লিপিবদ্ধ করেন।
অতঃপর উমাইয়া খলিফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ, হাদীস সংগ্রহের ও মদিনার শাসনকর্তা আবু বকর বিন হাজম সহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তা ও আলিমগনের কাছে একটি ফরমান জারি করেন যে, আপনারা মহানবী (সাঃ) হাদিস সমূহ সংগ্রহ করুন। কিন্তু সাবধান! মহানবী (সঃ) এর হাদিস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করবেন না।
আর আপনারা নিজ নিজ এলাকায় মজলিস প্রতিষ্ঠা করে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদিস শিক্ষা দিতে থাকুন। কেননা জ্ঞান গোপন থাকলে তা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই হাদিস জারির ওর মক্কা, মদিনা, সিরিয়া, ইরাক এবং অন্যান্য অঞ্চলে হাদীস সংকলনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু আমরা আজকে আপনাকে জানাবো প্রথম হাদিস সংকলনকারীর নাম কি?
কথিত আছে যে, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী সর্বপ্রথম হাদিস সংগ্রহ এবং সংকলনে হাত দেন। কিন্তু তাঁর সংকলিত হাদিস গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর ইমাম ইবনে জুরাইজ মক্কায়, ইমাম মালিক মদিনায়, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল ওহাব মিশরে, আব্দুর রাজ্জাক ইয়েমেনে, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক খুরাসানে, এবং সুফিয়ান সাওরী ও হাম্মাদ ইবনে সালমা বসরায় হাদিস সংকলনে আত্মনিয়োগ করেন।
ফেসবুকে লিখিত হাদিস গ্রন্থ সমূহের মধ্যে ইমাম মালিকের "মূয়াত্তা" গ্রন্থটি হাদিস সংকলনের ব্যাপারে বিপুল উৎসাহ- উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল এটি হাদিস শাস্ত্র অধ্যয়নে মুসলিম মনীষীদের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছিল। এই ফলশ্রুতিতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র হাদিসচর্চার কেন্দ্র স্থাপিত হতে থাকে।
অতঃপরঃ হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে অনেক মুসলিম মনীষী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর হাদিস সংগ্রহ করেন। তার মধ্যে বিখ্যাত হলেন ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ, এবং ইমাম ইবনে মাজাহ। আব্বাসীয় যুগে হাদিস লিপিবদ্ধের কাজ পরিসমাপ্ত হয়।
হাদিস শব্দের অর্থ কি?
আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হাতির শব্দের অর্থ কি জানবো ইনশাল্লাহ। হাদিস মূলত আরবি শব্দ, যার অর্থ কথা, বাণী, বার্তা, সংবাদ, বিষয়, খবর, ও ব্যাপার ইত্যাদি। হাদিস ' শুধুমাত্র একটি আভিধানিক শব্দ নয়। মূলতঃ হাদীস শব্দটি ইসলামের এক বিশেষ পরিভাষা। পবিত্র কোরআনে হাদীস শব্দটি ২৬ বার এসেছে এবং বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
হাদিস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় হাদীস পুস্তকাকারে সংকলিত হয়নি। এর প্রয়োজনও ছিল না। কেননা, তখন যেকোনো সমস্যার সমাধান তিনি নিজেই করে দিতেন। কিন্তু তার তিরোধান এর পর নব উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য হাদিস সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা পরিহার্য হয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিক ও বাস্তবতার নিরিখে প্রতিয়মান হয় যে, মহানবী (স) ইন্তেকালের পর পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখণ্ডে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। মরু আরবের চৌহদ্দি পেরিয়ে তা সাম্য ও শান্তি জ্যোতির বিচ্ছুরণ ঘটায় দেশ হতে দেশান্তরে, এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে। দেশে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসন। এ শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে গিয়ে হাদীসের জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি জেনে নিন।
নানা সমস্যা ও সংকট উত্তরণের জন্যও হাদিসের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে উঠে। মহানবী (সা) এর অবর্তমানে কুরআনের কোন কোন আয়াতের ব্যাখ্যা অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া সাহাবীদের শাহাদাত বরণ ও তিরোধানে হাদিস অবলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দেয়। অধিপত্য এভাবে স্মৃতিপটে হাদীস রক্ষিত হয়ে থাকলে সেগুলোর বিলুপ্তি এবং বিভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকে যায়।
নানা সমস্যা ও সংকট উত্তরণের জন্যও হাদিসের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে উঠে। মহানবী (সা) এর অবর্তমানে কুরআনের কোন কোন আয়াতের ব্যাখ্যা অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া সাহাবীদের শাহাদাত বরণ ও তিরোধানে হাদিস অবলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দেয়। অধিপত্য এভাবে স্মৃতিপটে হাদীস রক্ষিত হয়ে থাকলে সেগুলোর বিলুপ্তি এবং বিভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকে যায়।
সুতরাং হাদিস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। উপরিউক্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় ফেতনামার রাবী ও মোহাদ্দিসগণ হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের নিরলস প্রয়াস চালান এবং চিরদিনের জন্য হাদিস সংকলনের ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সরকারিভাবে সর্বপ্রথম হাদিস সংকলনের উদ্যোগ নেন কে?
আমার আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাবো সরকারিভাবে সর্বপ্রথম হাদিস সংকলনের উদ্যোগ নেন কে; কথিত আছে যে, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে শিহাব আল-জুহরি সর্বপ্রথম হাদিস সংগ্রহ এবং সংকলনে হাত দেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে হাদিসের পবিত্রতা রক্ষা এবং কুরআনে বিশদ ব্যাখ্যা ও পর্যালোচনার জন্য হাদিস সংগ্রহ ও সংকলনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হয়।
সর্বপ্রথম সংকলিত হাদিস গ্রন্থ কোনটি?
সর্বপ্রথম সংকলিত হাদিস গ্রন্থটি হল-ইমাম মালিকের ''মুয়াত্তা'' সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান প্রামান্য হাদীস গ্রন্থ। ইমাম মালিকের মুয়াত্তা হাদিস গ্রন্থটি হাদিস সংকলনের ব্যাপারে বিপুল উৎসাহ- উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। এটি হাদিস শাস্ত্র অধ্যায়নে মুসলিম মনীষীদের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছিল।
এরই ফলশ্রুতিতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র হাদিস চর্চার কেন্দ্র কিতাবুল ''উম্ম'' এবং ইমাম আহাম্মদ বিন হাম্বলের ''মাসনাদ'' গ্রন্থদ্বয় হাদিসের উপর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। অতঃপর হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে অনেক মুসলিম মনীষী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর হাদিস সংগ্রহ করেন। এবং আব্বাসীয় যুগে হাদীস লিপিবদ্ধদের কাজ পরিসমাপ্ত হয়।
লেখক এর মন্তব্যঃ
আমার আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে হাদিস সংকলনের স্বর্ণযুগ বলা হয় কোন শতাব্দীকে, প্রথম হাদিস সংকলনকারীর নাম কি? হাদিস শব্দের অর্থ কি? হাদিস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা। ও সরকারিভাবে সর্বপ্রথম হাদিস সংকলনের উদ্যোগ নেন কে? এছাড়া আরো বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
আমার লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, বা আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করুন, যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। আরো এইরকম গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুনঃ ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url