মানুষের শরীরে কত ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়, বিস্তারিত জানুন।
সম্মানিত পাঠক, আসসালামু আলাইকুম! মানুষের শরীরে কত ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। এটা নিয়ে আপনি হয়তো অনেক সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজাখুঁজি করেছেন, আবার কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়। এটা সম্পর্কেও আজকে আমরা আপনাকে জানাবো। আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েন, তাহলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই আর্টিকেলটিতে আমরা চেষ্টা করেছি। কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে, ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ, কোন ভিটামিন কি কাজ করে, ভিটামিন মোট কত প্রকার। এছাড়া আরো বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। যা আপনার অনেক উপকারে আসবে তো চলুন আমরা আজকে সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
মানুষের শরীরে কত ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়, বিস্তারিত জানুন।
আমাদের শরীরে ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই হয়ে থাকে। যেমন ভিটামিন A 'র অভাবে চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আবার ভিটামিন সি এর অভাবে ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু আমরা কি জানি মানুষের শরীরে কত ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। তো চলুন আজকে আমরা জেনে নিই।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় জেনে নিন।
মানবদেহের ভিটামিনসমূহ হলো-ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৪, ভিটামিন বি ৫, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি ৭, ভিটামিন বি ৯, ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, এবং ভিটামিন কে। এই সবগুলো ভিটামিন একজন মানুষের শরীরে পরিমাণ মতো থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়।
মাথার চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে অনেকেরই। খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে চুলের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অসময়ে চুল পেকে যাওয়া থামানো যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন খাওয়া-দাওয়া ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনে শৃঙ্খলা। কিন্তু আপনি কি জানেন কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়। ভিটামিন বি শরীরে কম হলে তার প্রভাব মাথার চুলে পড়ে। চুল সাদা হতে থাকে।
এমনকি কখনো কখনো চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই ভিটামিন বি কম হলে চুল দুর্বল হতে থাকে, ভিটামিন বি দুগ্ধজাত পদার্থে প্রচুর পরিমাণে থাকে। আবার চুলের জন্য ভিটামিন বি ৬, ও ভিটামিন বি ১২ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে এই ভিটামিনের কম হলে চুলে অক্সিজেনের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়। বায়োটিন ও ফলিক অ্যাসিড কম হওয়ায় চুলের গোড়ায় পুষ্টির অভাব হয়।
সে কারণে চুল পাকে, ঘুম কম হওয়া; রাতে নিয়মিত পরিমিত ঘুম না হওয়ার কারণে চুল পাকে, আবার জিনগত(জেনেটিক) হরমোন সমস্যা বা বংশগত কারণে অল্প বয়সে অনেকের চুল পাকে। মূলত চুল তৈরি হয় কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন দিয়ে। এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে, এবং চুল পেকে যাওয়ার কারণ গুলো দূর করলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর শুকিয়ে যায়।
শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন দরকার। শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে নানা রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। ভিটামিনের অভাব মানেই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও কমতে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর শুকিয়ে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন মানুষের শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে মুখ দেখেই বলে দেওয়া যায়।
সাধারণত খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের জন্যই ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। এক সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বে 100 কোটি মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে, অর্থাৎ দীর্ঘদিন ও পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুকতে থাকলে আমাদের শরীর শুকিয়ে যাবে। এছাড়াও লিভারের সমস্যা বা ডায়াবেটিস রোগ হলে আপনার শরীরকে শুকিয়ে দিবে।
কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে।
ওজন বৃদ্ধি করতে হলে আমাদেরকে কোন ভিটামিন খেতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক। শরীরে ওজন বৃদ্ধি করার জন্য আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, যদি খেয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই আমাদের ওজন বৃদ্ধি পাবে। কারণ হলো এসব উপাদানে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
আর ওজন বাড়ানোর জন্য অবশ্যই খাবার সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করে। যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে প্রত্যেক ভিটামিন আপনার শরীরে প্রবেশ করে যাতে ভিটামিনের কোন ঘাটতি না থাকে। ওজন বাড়ানোর জন্য যেকোনো ধরনের বাদাম খেতে পারেন। এটি ওজন বাড়তে সহায়তা করবে। ডিমকে অনেকে বলে প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন।
এতে ভিটামিন 'এ আছে যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। খেজুর, এটা একটা অসাধারণ ফল। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ও ফলিক এসিড আছে যার রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে। আশা করি এই খাবারগুলি আপনারা নিয়মিত খেলে আপনাদের ওজন খুব দ্রুতই বাড়বে।
ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ।
শরীরে যে কোন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিলে। তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। দেখা দিতে পারেন নানান সমস্যা। চুল পড়ে যাওয়া, স্নায়ুতে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, কিংবা দুর্বলতা, অবসাদ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি এমনই কিছু শারীরিক সমস্যার উদাহরণ। সকল পুষ্টি উপাদানের অভাবেই শরীর বিশেষ কিছু ইঙ্গিত দেয়, তা হতে পারে শারীরিক কিংবা মানসিক।
চলুন জেনে নেই ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ গুলো;-বিভিন্ন ভিটামিনের কার্যকারিতা ভিন্ন। ভিটামিনের ঘাটতি বিভিন্ন অসুস্থতার কারণ হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে ভিটামিনের ঘাটতি হলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, অস্থিরতার মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে ভিটামিনের ঘাটতি প্রকাশ পেতে থাকে।
কোন ভিটামিন কি কাজ করে।
মানুষের জীবনধারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। আর এই ভিটামিন গুলো আমরা পাই নিত্যদিনের খাদ্য থেকে। আমাদের শরীরে বিদ্যমান ভিটামিন গুলোর কাজ কি বা কোন ভিটামিন কি কাজ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক;
ভিটামিন 'সি'-ঃ
- ভিটামিন 'সি' রক্তের প্রবাহ বাড়ায়। এতে রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়ে।
- এটি রক্তনালির দেয়ালগুলোকে চাপমুক্ত রাখে।
- ফুসফুস ও শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায়।
- এটি বিভিন্ন ধরনের এলার্জির তীব্রতা কমায় এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- ঠান্ডা লাগার কারণে আমাদের মুখের ভেতর ও গলায় শুস্কতা দেখা দেয়, যা রোধ করতে ভিটামিন 'সি' সহায়তা করে।
- যে কোন ক্ষত জলদি সারায়।
- দেহ থেকে অবসন্নতা দূর করতে সাহায্য করে।
- কোষে কোলাজেন টিস্যু তৈরি করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন 'ডি'-ঃ
- ফুসফুসের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণের কাজ করে।
- দেহে ভিটামিন 'ডি' যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে, তবে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে। এতে ঘন ঘন অসুস্থ বোধ করা, হঠাৎ ঠান্ডা লাগা ও সর্দি-কাশি হতে পারে।
- ভিটামিন 'ডি' মাংসপেশি সচল রাখে।
ভিটামিন 'এ'-ঃ
- রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন 'এ'র ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
- দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ঘটায়।
- দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে। রাত কানা রোগ প্রতিরোধ করে।
- রক্তের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে।
- ত্বক সুস্থ রাখে।
- সংক্রমণ প্রতিহত করে।
- দেহকোষের গঠনে সহায়তা করে।
ভিটামিন ' বি১২'-ঃ
এটিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন 'সি'র কার্যকারিতাকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে
ভিটামিন 'বি১৩',-ঃ
ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, অবসাদবোধ, দুর্বলতা এবং মুখেও বলার ঘা প্রতিরোধ করে ভিটামিন 'বি ১৩'।
ভিটামিন 'বি৯'-ঃ
এটা পানিতে দ্রবণীয়। একে ফলিক এসিডও বলা হয়। এটি বিপাকের মৌলিক ক্রিয়াকে সহযোগিতা করে।
বিষণ্নতা, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে এই ভিটামিন।
স্নায়ুতন্ত্র ভালো রাখে।
ভিটামিন 'ই'-ঃ
- ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহ-ত্বক সতেজ রাখে।
- চুল পড়া রোধ করে।
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোখে এক ধরনের সমস্যা হয়। যার ফলে মেকুলার ডিজেনারেশনের সমস্যা দেখা দেয়, এটি অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। ভিটামিন 'ই' এটি প্রতিরোধ করে।
- স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষা করে স্নায়বিক নানা রোগ প্রতিহত করে।
- হরমোনের সমতা রক্ষা করে, মাতৃগর্ভে শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে ভিটামিন 'ই' কাজ করে।
ভিটামিন ' কে'-ঃ
রক্তক্ষরণের সময় রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। মানবদেহে অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লাইকোজেন হিসেবে যকৃতে জমা রাখতে সহায়তা করে। ক্যান্সার কোষ গঠনে বাধা দেয়।
ভিটামিন মোট কত প্রকার।
ভিটামিন হলো একধরনের পুষ্টি উপাদান যা খুবই সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এর অপর নাম হল খাদ্যপ্রাণ। আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন আসে ভিটামিন মোট কত প্রকার। ভিটামিন মূলত দুই প্রকারঃ ফ্যাট সলিউবল এবং ওয়াটার সলিউবল।
ফ্যাট সলিউবলঃ
নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই ধরনের খাদ্যপ্রাণ ফ্যাট বা চর্বিতে দ্রবীভূত হতে পারে। শরীর এই ভিটামিন গুলোকে ফ্যাটি টিস্যু বা লিভারে জমিয়ে রাখে দিনের পর দিন। অনেক সময় এই অবস্থায় এরা মাসও কাটিয়ে দিতে পারে। ভিটামিন A,D,E, এবং K হলো ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন।
ওয়াটার সলিউবলঃ
এরা পানিতে দ্রবণীয়। এদেরকে সঞ্চয় করে রাখা যায় না। পানিতে মিশে যায় বলে অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে মূত্রের সাথে বের হয়ে যেতে পারে। ভিটামিন C এবং সকল প্রকার B ভিটামিন ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন।
শেষ কথাঃ
প্রিয় বন্ধুরা, আমার এই আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে সঠিক । মানুষের শরীরে কত ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়, কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়, কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে, কোন ভিটামিন কি কাজ করে ইত্যাদি।
এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও উপকৃত হতে পারে। আর এইরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে রাত্রী গ্রুপের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url